প্রাচীন জৈন্তা রাজ্যের ঐতিহাসিক কিছু স্হাপনা ও ধ্বংসাবশেষ মেঘালিথ চিন্হের আদলে জৈন্তাপুর উপজেলার সর্বপ্রথম মসজিদটি সরকারি স্কুলের পশ্চিমে অবস্থিত।
১৮০০ শতকের প্রথম দিকে ছোট পরিসরে উপজেলা সদরের চৌরিহাটি এলাকায় জৈন্তা রাজ্যের প্রথম মসজিদটি নির্মিত হলেও সেই সময়কার ধর্মীয় বৈষম্য ও ষড়যন্ত্র স্বীকার হয়ে উপজেলার ববরবন্দ এলাকায় স্হানান্তর করা হয়েছিলো মুসলমানদের প্রথম উপসনালয়টি।
দীর্ঘ দুই শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও জৈন্তারাজ্যের ঐতিহাসিক কিছু স্হাপনা যেমন ইরাদেবী রাজবাড়ী, সারিঘাট পান্হশালা, বড়দেওল, রাজবাড়ী মাঠ সংলগ্ন কালী মন্দির কিংবা সারী ঢুপিমঠ এলাকার মত স্মৃতি বিজড়িত হয়ে রয়েছে চৌরিহাটি এলাকায় প্রথম মসজিদের পরিত্যক্ত অংশ ও পাঁচ পীরের মোকাম।
গেলো কয়েকমাস পূর্বে জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বড়দেওল অংশে ভয়াবহ ময়লার ভাগাড় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সংস্কার করে সেখানে নান্দনিক ফুলের বাগানে পরিনত করা হয়েছিলো। এ সময় জৈন্তাপুর সদর এলাকায় বানিজ্যিক ও আবাসিক এলাকার বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য ততকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া সদর থেকে কিছুটা অদূরে চন্দ্রাবিল এলাকাকে নির্ধারণ করে দেন।
তবে কিছুদিন স্হানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা ময়লা আবর্জনা নিয়মিত স্হানে সংরক্ষণ করলেও পরবর্তীতে বড়দেওল যা বর্তমানে ফুলের বাগান সেখান থেকে ২০০ মিটার দূরে পাঁচ পীরের মোকাম ও ঐতিহাসিক প্রথম মসজিদের আশপাশে ফেলতে শুরু করে। যার ফলে মাত্র তিন মাসের মাথায় উক্ত এলাকায় বড় ময়লার ভাগাড়ে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে এলাকাটি।
যার ফলে উক্ত এলাকায় দুইটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি স্কুল ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সহ আশপাশের সাধারণ মানুষ চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে থাকে।
এমতাবস্থায় প্রাথমিকভাবে উক্ত স্হান হতে স্হানীয় চৌরিহাটি সেবা সংঘের উদ্যোগে ও নিজস্ব অর্থায়নে ময়লার ভাগাড় অপসারণ সহ প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলো দৃশ্যমান করার উদ্যোগ করা হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জৈন্তারাজ্যের প্রথম মসজিদের সর্বশেষ নিদর্শন, পরিত্যক্ত একটি কুয়া ও কয়েকজন মুসলিম পীরে কবরস্থানের আশপাশের ময়লা আবর্জনা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেই সাথে অপ্রয়োজনীয় আগাছা অপসারণ সহ পুড়িয়ে ফেলে পরিস্কারের কাজ চলছে পুরোদমে। সেই সাথে উক্ত এলাকার বাউন্ডারি দেয়ালে নতুন রং করে সেখানে জনসচেতনতামুলক বানী লিখে দেয়া হয়েছে। গত ৭ই ফেব্রুয়ারী থেকে চৌরিহাটি সেবা সংঘের অর্থায়নে কাজ শুরু হয়ে এখন সংস্কার প্রায় শেষের দিকে।
এ বিষয়ে স্হানীয় ইলেকট্রনিকস ব্যবসায়ী ও চৌরিহাটি সেবা সংঘের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুস সালাম বলেন, স্হানীয়ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে এই সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন উক্ত স্হানটিতে আরো সংস্কার বিশেষ করে মসজিদ ও মোকামগুলো সংস্কার প্রয়োজন। সে কারণে তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করার আহবান জানান।
জৈন্তাপুর সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাহানা জাফরিন রোজী চৌরিহাটি সেবা সংঘের এই কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, বড়দেওল এলাকায় ভয়াবহ ময়লার ভাগাড় অপসারণ করার পর স্কুলের দ্বিতীয় গেইটের পাশে পুনরায় ময়লার ভাগাড় সৃষ্টির ফলে আবারও স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছিলো শিক্ষার্থীরা।তিনি বলেন বড়দেওলের মত উক্ত স্হানটিতে ঐতিহাসিক রাজবাড়ীর অংশ হিসেবে সংরক্ষণ ও সংস্কার করতে করতে উপজেলা প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
এ বিষয়ে স্হানীয় বাসিন্দা ও ইমরান আহমদ সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে একটা ভোগান্তি শেষ হতে না হতেই পুনরায় মানুষের অসচেতনতার কারণে আবার ভোগান্তি শুরু।
বর্তমানে স্হানীয় উদ্যোগে ময়লা অপসারণ সহ কিছু সংস্কার কাজ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।তিনি বলেন বিগত সময় বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর ও মেঘালিথ টম্বের উদ্যোগে ইরাদেবী রাজবাড়ী সংস্কার ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বড়দেওল ও রাজবাড়ী মাঠ সংলগ্ন কালীমন্দির সংস্কার করা হয়েছে।তেমনি জৈন্তারাজ্যের ঐতিহাসিক প্রথম মসজিদ ও পাঁচ পীরের মোকাম এলাকাটি স্হায়ী সংস্কার অতীব জরুরি। কারণ উক্ত স্হানটি কোন দূর্গম এলাকায় নয় বরং প্রতিদিন শত শত মানুষ চলাচলের মত জনবহুল এলাকায় এটি অবস্হিত। তিনি বলেন উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্হায়ীভাবে সংস্কার করা হলে এর যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ করবে স্হানীয় চৌরিহাটি সেবা সংঘ।
এ জন্য জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমার প্রতি উক্ত স্হানে সুদৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরো জানান বর্তমান সংস্কারের অংশ হিসেবে পুরো ময়লার ভাগাড়কে অপসারণ করে পাশ্ববর্তী দেয়ালে জনসচেতনতামুলক বানী লেখা হয়েছে। সেই সাথে ময়লা আবর্জনা না ফেলতে স্হাপন করা হয়েছে নির্দেশনা। পাশাপাশি রাতের আধার কাটতে উক্ত স্হানে সংযোজন করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক বাতি।