নিজস্ব সংবাদদাতা- জৈন্তাপুর উপজেলার ৬ নং চিকনাগুল ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত উমনপুরে এক দাদান ব্যবসায়ী খপ্পরে পড়ে সর্বহারা হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দাদান ব্যবসায়ীর মামলায় বাড়ী ছাড়া বেশকয়েকটি টি পরিবার। দাদন ব্যবসায়ী খপ্পর হতে রক্ষা পেতে আদালতে অভিযোগ করেন এক ভোক্তভোগী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালে স্হানীয় এক ব্যবসায়ী মুদির দোকান পরিচালনার জন্য টাকার প্রয়োজন হলে ব্যাংক লোন করার প্রয়োজন হয়। সেই ব্যাক্তি হলেন শিকারখাঁ গ্রামের মনফর আলীর ছেলে মো. তজমুল আলীর (৩২)।তিনি তখন সিদ্ধান্ত নেন ব্যাংক লোন গ্রহণ করবেন। বিষয়টি জানতে পেরে দাদন ব্যবসায়ী বিবাদী তজম্মুল হোসেইন উরফে টিয়া হাজী পূর্ব পরিচিত হওয়ায় বাদীর পিতা মনফর আলীর মাধ্যমে আশ্বাস করেন ব্যাংক লোন গ্রহণনের কোন দরকার নেই, যত টাকার প্রয়োজন দাদন ব্যবসায়ী তজম্মুল হোসেইন উরফে টিয়া হাজী কর্জ দেবেন।
পরে এই কথার প্রেক্ষিতে ব্যাংক লোন না নিয়ে জুডিসিয়াল ব্লাংক ষ্ট্যাম্প ও বাদীর পিতার অগ্রণী ব্যাংক গ্যাস ফিল্ড শাখার হিসাব নং ০২০০০০৩২০১৭৬৬ এর ব্লাংক চেক পাতা নং ১১৯২৩০৮৯৩১১ স্বাক্ষর নিয়ে ৩ লক্ষ টাকা কর্জ প্রদান করেন।
পরবর্তীতে চতুর দাদন ব্যবসায়ী তজম্মুল হোসেইন উরফে টিয়া হাজী কৌশল অবলম্বন করে ৩ লক্ষ টাকার বিপরিতে ৬ লক্ষ ২০হাজার টাকা আদায় করে ব্লাংক চেক ও জুডিসিয়াল ব্লাংক ষ্ট্যাম্প ফিরত না দিয়ে আইনজীবির মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশে জানান যে, আগামী ৩০দিনের মধ্যে তজম্মুল আলী ৯ লক্ষ টাকা ও তারা পিতা মনফর আলী ৬ লক্ষ টাকা পরিশোধ করার জন্য।
বাদী তজম্মুল আলী অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন এভাবে তিনি এলাকার সহজ সরল মানুষের নিকট জুডিসিয়াল ব্লাংক ষ্ট্যাম্প ও ব্লাংক চেকের মাধ্যমে বহু ব্যক্তির নিকট দাদন ব্যবসায় টাকা দিয়ে এলাকায় মানুষজনকে সর্বহারা করছেন দাদন ব্যবসায়ী তজম্মুল হোসেইন উরফে টিয়া হাজী।
সরেজমিনে বিষয়টি জানতে গেলে এলাকার ভোক্তভোগী সংখ্যালঘু এক পরিবারের সদস্য মিনতি রায় জানান, টিয়া হাজির নিকট হতে ১লক্ষ টাকা কর্জ নেন। পরবর্তীতে ১লক্ষ টাকা পরিশোধ করেন। বর্তমানে তার বিরদ্ধে ৭লক্ষ টাকার লিগ্যাল নোটিশ পেয়েছেন। এদিকে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের কর্মচারী বশির আহমদ জানান, তার পরিচিত একব্যক্তি বশির আহমদকে জিম্মাদার রেখে ৫লক্ষ টাকা কর্জ নেন। পরে জিম্মাদার বশির আহমদ মান সম্মানের ভয়ে তিনি হাউজ বিল্ডিং লোন নিয়ে ৫লক্ষ টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে জিম্মাদার সহ তার নিকট আত্মীয় বিরুদ্ধে ২৫লক্ষ টাকার লিগ্যাল নোটিশ পেয়েছেন।
ভুক্তভোগী অপর একজন কাপনা কান্দি গ্রামের আলিম উদ্দিন জানান,তিনি ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেন, ৩লক্ষ ৮০হাজার টাকা পরিশোধ করেন। বর্তমান ১৫লক্ষ টাকার লিগ্যাল নোটিশ পেয়েছেন।
এ দিকে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড এর কর্মচারী মো. আয়াত উল্লাহ জানান, তিনি ১লক্ষ ৫০হাজার টাকা নিয়েছেন, পরবর্তীতে ২লক্ষ ৫০হাজার টাকা পরিশোধ করেন, বর্তমানে ৫লক্ষ টাকার লিগ্যাল নোটিশ পেয়েছেন। রাজু আলী অপর একজন জানান, ২০হাজার টাকা ধার নিয়ে ১৬হাজার টাকা পরিশোধ করেন। পরর্তীতে মাত্র ৪ হাজার টাকা বকেয়া থাকায় তিনি ৫ লক্ষ টাকার লিগ্যাল নোটিশ পেয়েছেন। তাদের দাবী তদন্ত পূর্বক দাদন ব্যবসায়ী তজম্মুল হোসেইন উরফে টিয়া হাজীর কার্যক্রম তদন্ত করে সুষ্ট বিচারের পাশাপাশি দাদন ব্যবসায়ীর হাতে থেকে রক্ষার দাবী জানান।
এদিকে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে হাজী তজম্মুল হোসেইন উরফে টিয়া হাজী জানান, তিনি জমি কেনা বেচার ব্যবসা করেন। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলো শতভাগ মিথ্যা বলে দাবী করেন। তিনি বলেন, আমি সুধের ব্যবসা করিনা, কোর্টে কোন প্রমাণ পাবেন না, ইসমাইল আলী আশিক নামে এক ব্যবসায়ী আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, সেই মামলা হতে আমাকে সুদখোর প্রমাণ করতে না পারায় কিছু দিন আগে মামলা হতে মুক্ত হয়েছি। প্রশ্নের একপর্যায়ে তিনি আরও বলেন, এরা এই ভাবে আমার নিকট হতে টাকা নেয়, আমার লিগ্যাল নোটিশ আছে, আমার টাকা নিবেন ৫০% লাভ দিবেন এই চুক্তিতে। এই রকম ভাবে আমার নিকট হতে অনেকেই নেন। টাকা নিবেন, ৫০% হারে লাভ দিবেন।
তিনি বলেন, আমি লিগ্যাল নোটিশ করেছি ১ মাসের সময় দিয়ে, তারমধ্যে আপোষ না করলে আইনগত পক্রিয়ায় মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমার নির্যাতনে কোন মানুষ ঘর বাড়ী ছাড়া হয়নি। এগুলো মিথ্যা রটানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জানান, ভুক্তভোগী মো. তজমুল আলী আদালতের মাধ্যমে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আদালত অভিযোগটি তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা অভিযোটির সুষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন ।